চাঁদা না পেয়ে সড়কে পিলার গেড়ে দিলেন ইউপি সদস্য!

0
289

কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার পূর্ব মুক্তারকুল এলাকায় বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘ইউএনওর নামে নেয়া চাঁদা’ বন্ধ করায় সড়কের মাঝে পিলার গেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার পর হতে গতকাল বেলা ১২ টা থেকে এলাকায় স্বাভাবিক যানচলাচল ব্যহত হচ্ছে। এতে রোগী, শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একজন জনপ্রতিনিধির এমন আচরণের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন স্থানীয়রা। তবে ইউএনওর ‘কাছের লোক’ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি থাকায় কেউ খোলাসা করে তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করছেন না।

অভিযুক্ত নাছির উদ্দিন ঝিলংজা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

স্থানীয় আবুল হোসেনের ছেলে মুজিব উল্লাহ দাবি করেন, বছর দুয়েক আগে তিনি ও মেম্বার নাছির দু’জনে মিলে একটি ড্রেজার ক্রয় করে বালু উত্তোলন করে নাছিরের মালিনাধীন ডাম্পার দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছেন। এরমধ্যে নাছিরের বাড়ির পাশের জমিতে কয়েকলাখ ফুট বালু মজুত করে রাখা হয়। টকার প্রয়োজন হওয়ায় মুজিব ওই বালু বিক্রি করতে চাইলে নাছির বাঁধা দেয়ায় তাদের ব্যবসায়ীক বন্ধন ভেঙ্গে যায়। দুজনের বন্ধন থাকাকালীন সময়ে প্রতিমাসে ইউএনওর নামে একটি খরচ কাটতেন। পৃথক হয়ে যাবার পর থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নামে একেক মাসে একেক এমাউন্টে টাকা নিয়েছেন। সম্প্রতি টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করেন মুজিব। এরপর থেকে উপজেলা প্রশাসন সেখানে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তার কিছু পাইপ নষ্ট করে দেন।

মুজিব উল্লাহ বলেন, মেম্বার নাছির আর আমি এক সময় ব্যবসায়ীক পার্টনার ছিলাম। সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে তিনি ইউএনওর লোক দাবি করে স্যারকে ম্যানেজ করার জন্য আমার কাছ থেকে টাকা নিতেন। সম্প্রতি টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে স্যার এসে অভিযান করে আমার পাইপগুলো কেটে দেন।

মুজিব আরও বলেন, টাকা না দিলে রাস্তা বন্ধ করে দিতে ইউএনও স্যার তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন দাবি করে ৩০ হাজার টাকার জন্য নানাভাবে চাপ দেন। টাকা না দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় পিলার গেড়ে দেন।

ঝিলংজার দুই জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুলত নাছির মুজিবকে ড্রেজার ব্যাবসায় নামিয়েছেন। একসময় তারা দু’জন মিলেমিশে বালু ব্যবসা করেছেন। বালু বহন করতে নাছির ডাম্পারও কিনেন। হয়তো কোন কারণে হিসাব-নিকাশে গড়মিল হওয়ায় নাছির এখন মজিবদের ঘোর বিরোধিতা করছেন। ভোটের সময় তারা একে অপরের গলার মালা ছিলেন। সম্প্রতি তাদের অভ্যন্তরীণ ঝামেলার খেশারত দিচ্ছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলা করা লোকজনসহ স্থানীয়রা।

বালু কারবারিদের অভিযোগ, নিয়মিত মাসোয়ারা না পেলে তালিকাভুক্তদের বাদ দিয়ে মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযানে নামে উপজেলা প্রশাসন। এসময় বালু উত্তোলনের সরঞ্জামসহ পাচার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করে পরবর্তীতে সমঝোতায় আবার ছেড়েও দেন।

ঝিলংজার ৬নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক আমিন বলেন, নাছিরের পড়া-লেখা না থাকলেও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছের মানুষ হয়ে কিভাবে সুবিধা নেয়া যায়; তা ভালো মতোই রপ্ত করেছেন। উপজেলায় যেকোন অফিসার যোগদানের পর পরই দামি উপহার দিয়ে ধীরে ধীরে ঘনিষ্ট হয়ে উঠে। নাছির তার কাছে আসা লোকজনকে প্রায়শ বলে বেড়ান, জেলা-উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার কথায় উঠে-বসে। যেকোন সমস্যা নিমিষেই সমাধান হয় বলে আশ্বাস দেন তাদের। এভাবে কৌশলে কাজ ভাগিয়ে নেওয়াসহ তদবির বানিজ্য করে বর্তমানে টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন তিনি।

তিনি আরোও বলেন, একসময়ের সবজী বিক্রেতা নাছির টাকার জোরে জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর থেকে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে গিয়ে ক্ষমতার অহংবোধে ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। এলাকার সচ্ছল ব্যাক্তিদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, বিচারের নামে দু’পক্ষের টাকা আত্মসাৎ করাসহ এমন কোনো দুঃসাহসী অপকর্ম নেই যা সে করেনি ইতিমধ্যে। প্রশাসনের ঘনিষ্ট হয়ে উঠা নাছিরের সাহস এখন আকাশচুম্বী।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সদস্য নাছির উদ্দীন ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর অভিযোগের বিষয়টি তুললে ১০ মিনিট পর ফোন করার কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আর কল ধরেননি এবং নিজেও বেক করেননি।

এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়ার মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হলে তা সিন করলেও রিপলে দেননি।

একই বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এফএস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here