রাজনীতিতে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ৭০ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। তিনি ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা।
বাছাইকালে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে না আসায় এবার প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে এলেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। নিজের প্রার্থিতা বাতিলের পর মাকে ছায়া প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে রেখেছেন জাহাঙ্গীর।
আর ছেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে দাবি করে প্রতিবাদ হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছেন জায়েদা খাতুন।
শনিবার দুপুরে নগরের ছয়দানা এলাকার নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে সাবেক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জায়েদা খাতুন বলেন, ‘মিথ্যা ও ভুয়া অভিযোগ তুলে আমার ছেলের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১৮ মাস ধরে আমার ছেলের ওপর অনেক অবিচার হয়েছে। তার সবকিছু কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাই আমি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছি। দেখি, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় জনগণ আমাদেরকে কেমন ভালোবাসেন। আশা করছি, নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের জনগণ আমাদের পাশে রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে নগরবাসীর নাড়ির সম্পর্ক। সে দীর্ঘদিন ধরেই নগরবাসীর কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করেছে। নগরের প্রশস্ত রাস্তাঘাট তার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার ফসল। অথচ নগরের উন্নয়ন থমকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ তোলা হয়েছে। এটা নগরবাসী জানেন। জনগণ ভোটের মাধ্যমে সব অপবাদের জবাব দেবেন এবার।
‘নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে তার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করব। আমিও অনেক আগে থেকেই ব্যক্তিগতভাবে নানাভাবে মানুষের সেবা করে আসছি। সে হিসেবে নগরবাসী আমাকে নির্বাচিত করলে নিরাশ হবেন না।
‘আমি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, ছেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।
মা ও ছেলের সম্মিলিত এই লড়াই খুব কঠিন হবে বলেও মনে করেন না জায়েদা খাতুন।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান জানান, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার ও ইসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। ৮ মে’র পর জাহাঙ্গীরের মা ভোটের মাঠে থাকবেন কিনা সন্দেহ তার।
আজমত উল্লা বলেন, ‘ভোটের মাঠে যে-ই থাকুক না কেন জনগণ উন্নয়নের পক্ষে এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। জাহাঙ্গীর আলম ভোটের মাঠে শূন্য হয়ে গেছেন। তাই মাকে সাথে নিয়ে পিছু হটার পথ খুঁজছেন।’
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মহানগরীতে ভোটের চেয়ে জাহাঙ্গীর-সংশ্লিষ্ট আলোচনাই ভোটারদের মধ্যে বেশি। এসবের মধ্য দিয়ে তার মা মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনসহ অন্য মেয়র প্রার্থীর দিকে ভোটারদের সহানুভূতি চলে যেতে পারে। তাতে করে নৌকার প্রার্থী আজমতের ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
২৫ মে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বাছাইয়ে ঋণখেলাপির কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। মা ও ছেলে দুজন মনোনয়নপত্র কেনায় তার মায়েরটা বৈধ বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
জাহাঙ্গীর আলম আপিলে প্রার্থিতা ফিরে না পাওয়ায় এখন উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলছেন।
এফএস