Saturday, December 9, 2023
Homeস্পটলাইটপাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, মাইকিং করেও আবাস ছাড়ছেনা কেউ

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, মাইকিং করেও আবাস ছাড়ছেনা কেউ

কক্সবাজার প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজারে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এমন খবরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানান।

এরপর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারিদের মাইকিং করলেও অনেক পরিবার তাদের আবাস ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না; তাদের বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা কেউ মানছেন না।

আসন্ন বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতলভূমিতে আনা না হলে ব্যাপক প্রাণহানিসহ মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

তাদের মতে, কতটা পাহাড়ি এলাকা অবৈধ দখলে আছে তা জানা গেলেও কি পরিমাণ খাস জমি অবৈধ দখলে রয়েছে তার সঠিক এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব লোকজনকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন। মাইকিং করে সতর্কমূলক প্রচারণা চালান। এ সময় কিছু মানুষ সরে এলেও পরে আবার এসে আগের জায়গায় বসবাস শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর পাহাড় দখল করে বসবাস করছেন তিন লাখ মানুষ। যা কক্সবাজারের মোট বনভূমির এক তৃতীয়াংশ। এর বাইরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে ৪ হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গাদের বাদ দিলে এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি আরো প্রায় ৫০ হাজার পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বসতি স্থাপনের জন্য কক্সবাজার অঞ্চলে কাটা হয় নির্বিচারে পাহাড়। বিশেষ করে বর্ষা এলেই শুরু হয় পাহাড় কাটার ধুম, লক্ষ্য ভূমি সমতল করে বসতি গড়া। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, গত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩১৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন।

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। এসব জমি দখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ।

এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ সেনাসদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়। ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন।

২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১১-১৩ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৯ জন। ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে ৫ জন। ২০১৬ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন। ২০১৭ সালে ২৬ জন। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় ২৮ জন।

২০১৯ সালে ২২ জন। ২০২০ সালে ১৫ জন, ২৭, ২৮ জুলাই ২ দিনে মারা যায় ১৪ জন। ২০২২ সালে মারা যায় ২৫ জন। চলতি বছর বর্ষার আগেই রামু টেকনাফে পাহাড় ধসে মারা যায় ৫ জন। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মারা যায় ২৮ জন।

পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, প্রতি বছর কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুধু বর্ষা এলে কিছুটা চোখে পড়ে। বর্ষা চলে গেলে থেমে যায় সবকিছু। এর ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে কক্সবাজারের পাহাড় নিধন।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলায় ১৫২ স্পটে ১২৯৮ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভায় ৬ ওয়ার্ডে ৭ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবারের ঘূর্ণিঝড় মোখা ও বৃষ্টিতে ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে।

এফএস

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments