গত ২১ বছরে সুন্দরবনে ১৩টি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর স্মৃতি ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের। ১৫ নভেম্বর ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল উপকূলীয় এলাকায়। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা সুন্দরবনে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করেছিল। তবে এসব ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে বনের ক্ষতি হয় ব্যাপক, ক্লান্ত হয়ে যায় সুন্দরবন।
এর মধ্যেই আরেক ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। শনিবার (১৩ মে) মধ্যরাত নাগাদ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর বলছে, সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়েই উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সব সাইক্লোনের বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। সিডরের সঙ্গে এর তুলনা করলে বলা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি বঙ্গোপসাগরে থাকবে ততক্ষণ এর শক্তি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। উপকূলে আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত এটি শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবরের সূত্র: জাগো নিউজ
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা অনেক দ্রুত উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ১০টার মধ্যেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘণ্টায় ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
পরিবেশ ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘটে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে প্রাণহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ার পেছনে সুন্দরবনের প্রতিরক্ষা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিককালে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা তুলনামূলক অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঘন ঘন আঘাত সহ্য করে সুন্দরবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়ার অধিদপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ ১৩ মে রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
এফএস